পটুয়াখালীর গলাচিপায় একটি সরকারি ঘর পাওয়ার আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ভূমিহীন আতাহার তালুকদার। অসহায় ভূমিহীন আতাহার তালুকদার প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি ঘর পাওয়ার আশায় ঘুরলেও মেলেনি কোন ঘর।
আতাহার তালুকদার (৬৩) হচ্ছেন গলাচিপা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মৌজে আলী তালুকদার এবং মৃত নুরজাহান বেগমের ছেলে। আতাহার তালুকদারের ছেলেরা তাকে ফেলে ঢাকায় চলে যায়। এদেকে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কোন খোঁজ রাখে না। আতাহার তালুকদারের স্ত্রী মারা যাওয়ায় তিনি আরো একা হয়ে পড়েন।
আশ্রয় নেন গলাচিপা সাহা বাড়ি সংলগ্ন সরকারি কৃষি অফিসের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে। রিক্সা চালিয়ে কোন রকম চলে তার সংসার। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন রিক্সাটাও ঠিকমত চালাতে পারেন না। এছাড়া শরীরে বাসা বেধেছে বিভিন্ন রোগ শোক। তার থাকার মত কোন ঘর বা জায়গা নাই। এ বিষয়ে আতাহার তালুকদার জানান, আমাদের গ্রামের বাড়ি ভুরিয়া লঞ্চঘাটের কাছে ছিল। নদী গর্ভে আমাদের ঘর বাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ায় আমার বাবা দেশ স্বাধীনের পরে গলাচিপা আসেন। সেই থেকে ঘর ভারা নিয়ে বাবা আমাদের সংসার চালাচ্ছিলেন। বাবা, মা ও স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে আমি প্রায় নিস্ব হয়ে যাই।
পরে আমার ছেলেকে বিবাহ করালে বিবাহের তিন বছরের মাথায় ছেলের বউ একটি কন্যা সন্তান রেখে মারা যায়। আমার ছেলে কন্যা সন্তান ও আমাকে ফেলে ঢাকায় গিয়ে বিবাহ করে সেখানেই সংসার করছে। আমার কোন খোঁজ নিচ্ছে না আজ প্রায় দশ বছর। কোথায় আছে, কেমন আছে তাও আমি জানি না। ঘর ভাড়া জোগাড় করতে না পারায় সরকারি কৃষি অফিসের পরিত্যক্ত একটি রুমে পরে আছি এতদিন ধরে। আমার নাতনীটিকে পল্লী উন্নয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছি। সে এখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বৃদ্ধ বয়সে আমার লাঠি বলতে ওই নাতনী। শেষ বয়সে যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার জায়গাসহ একটি সরকারি পেতাম তাহলে নাতনীকে নিয়ে খেয়ে পড়ে ভাল থাকতাম।
এ বিষয়ে সদর রোডের দ্বীপ কসমেটিক্স এর মালিক মিঠুন দুয়ারী বলেন, আসলেই আতাহার তালুকদার রিক্সা চালিয়ে ও আমাদের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে জীবন সংসার চালায়। আমাদের বাসার সামনেই পরিত্যক্ত কক্ষটিতে প্রায় দশ বছরের মত বসবাস করছে সে। পলাশ সাহা ও শিউলি রায় বলেন, আমাদের বাসার পিছনে এই ভাংগাচোরা নোংরা রুমেই অনেক বছর ধরে ছোট নাতনিকে নিয়ে বসবাস করছেন আতাহার তালুকদার। বৃষি এলেই শোয়ার বিছানা গুছিয়ে এক কোনে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহেব আলী মাতুব্বর বলেন, আসলেই আতাহার তালুকদার অসহায়, ভূমিহীন, হত দরিদ্র একজন মানুষ। তার জায়গা-জমি ঘর-বাড়ি কিছুই নেই। সে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ বিষয়ে পৌর মেয়র আহসানুল হক তুহিন বলেন, আতাহার তালুকদারের জন্য একটি সরকারি ঘর দরকার।
আসলেই সে অসহায় এবং হত দরিদ্র। সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম ধলা মিয়া বলেন, ছোট বেলা থেকেই আতাহার তালুকদার জীবন যুদ্ধে বেঁচে আছে। সরকারিভাবে আতাহার তালুকদার একটি ঘরে পেলে বাকি সময়টুকু শান্তিতে বসবাস করতে পারতেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিষ কুমার বলেন, আমরা খোজ খবর নিচ্ছি। অসহায় পরিবার হলে এবং সরকারি বরাদ্দ আসলে অবশ্যই তিনি ঘর পাবেন।